• Thu. Oct 23rd, 2025

কালী পূজা ২০২৫: তারিখ, মাহাত্ম্য ও উৎসব

ByPutul

Aug 12, 2025
কালী পূজা ২০২৫

বাংলার মনন ও সংস্কৃতিতে কালী পূজা ২০২৫ এক অনন্য ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক উৎসব। শক্তির দেবী কালীকে আরাধনা, অন্ধকার থেকে আলোর পথে চলার প্রতিশ্রুতি, সমাজে শুদ্ধতা ও সৌভাগ্যের ডাক—সব কিছু নিয়ে এই অপার রাত বাংলার ঘরে ঘরে ফিরে আসে। ২০২৫ সালের পূজা আয়োজনে রয়েছে নতুনত্ব, শ্রম, পরিশ্রম আর অগণিত মানুষের ভক্তি।

কালী পূজা ২০২৫ সময়সূচী: নির্ভুল তারিখ ও শুভ মুহূর্ত

কালী পূজা ২০২৫ পালিত হবে ২০ অক্টোবর, সোমবার। এই দিনটি কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে পড়ছে, যা মায়ের আরাধনায় সবচেয়ে শুভ বলে বিবেচিত। অমাবস্যা তিথি শুরু হবে ২০ অক্টোবর দুপুর ৩টা ৪৪ মিনিটে এবং শেষ হবে ২১ অক্টোবর বিকেল ৫টা ৫৪ মিনিটে। নিশিথ কালের শুভ মুহূর্তে মূল পূজা—রাত ১১:৪১ থেকে ১২:৩১ পর্যন্ত (মোট ৫১ মিনিট)—এই সময় দেবী কালী তন্ত্রমতে আরাধিত হন। একই রাতে দীপাবলি, লক্ষ্মী আরাধনার উৎসবও পালিত হয়.

কালী পূজার উৎপত্তি ও ঐতিহাসিক পটভূমি

কালী পূজা হিন্দুধর্মের শক্তিপূজার বিরল উদাহরণ। বাঙালি জীবনে এই পূজার মাহাত্ম্য ও জনপ্রিয়তা ব্যাপক। কালীর উৎপত্তির পৌরাণিক দৃষ্টিতে—পুরাণ মতে, দেবতাদের আর্তনাদের প্রেক্ষিতে মা মহামায়া ভয়ঙ্কর রূপে আবির্ভূত হয়ে অসুরদের বিনাশ করেন, সেই রূপই কালী। বাংলার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ও জমিদারদের হাত ধরে সামাজিকভাবে পূজা জনপ্রিয় হয়; উনিশ শতকে রামকৃষ্ণ পরমহংস মা কালীর একনিষ্ঠ ভক্ত হয়ে পূজার জনপ্রিয়তা বহুগুণ বাড়িয়ে দেন।

কালী পূজার কারণ ও মাহাত্ম্য

কালী পূজা কেন করা হয়—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে পাই:

  • শক্তির দেবীর আরাধনা: মা কালীকে হিন্দুধর্মে শক্তির প্রতীক হিসেবে পূজা করা হয়। তিনি দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন, অজ্ঞান ও অশুভ শক্তির বিনাশকারী।
  • অন্ধকার থেকে মুক্তি: কার্তিক অমাবস্যার গভীর রাতেই কালী পূজা হয়, অর্থাৎ যখন চারপাশে অন্ধকার, তখনই মা কালীকে আহ্বান করা হয়—উৎস অমঙ্গল দূর করে আলোর পথে চলার জন্য।
  • ভক্তের আত্মশুদ্ধি: কালী পূজার মধ্য দিয়ে অন্তরের অশুদ্ধতা, দুর্বলতা ও অশুভ শক্তিকে জয় করার শিক্ষা দেওয়া হয়।
  • তান্ত্রিক সাধনা: বাংলায় তন্ত্র মতে কালী পূজা জনপ্রিয়। বিশ্বাস, তান্ত্রিক সাধনার মাধ্যমে মা কালী ভক্তকে সিদ্ধিলাভ ও মুক্তির পথ দেখান।

বাংলায় কালী পূজার ইতিহাস

বাংলার ইতিহাসে কালী পূজার শুরু সপ্তদশ শতকে নবদ্বীপের তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের হাত ধরে। তাঁর পূর্বে কালী উপাসনার রীতি আরও ব্যক্তিগত ছিল—তাম্রপটে বা খোদাই করে যোগমন্ত্রে পুজো হতো। কালীমূর্তি ও সামাজিকভাবে পূজা প্রচলের কৃতিত্ব তাঁর। তার পরে অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতকে নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় ও জমিদারদের প্রভাব, পরবর্তীতে ধারাবাহিকভাবে বাংলার সমাজ-সাংস্কৃতিক পরিসরে কালী পূজার সম্প্রসারণ ঘটে। কালী পূজা জনপ্রিয় হতে থাকেন রামপ্রসাদ সেন, রামকৃষ্ণ পরমহংস যাঁরা যুগপৎ মা কালীর প্রতি ভক্তি, সাধনা, ও জনজাগরণের বার্তা ছড়িয়ে দেন।

পুরাণ মতে, দেবতার আর্তনাদে মা মহামায়া কৈলাস থেকে কালো রূপে অবতীর্ণ হন ও দুষ্ট অসুর শুম্ভ-নিশুম্ভ বিনাশ করেন; সেই শক্তির আরাধনাই কালী পূজা। মা কালী শুধু সংহারী নন, মাতৃরূপী, কল্যাণকারী ও সমস্ত জীবনের মঙ্গল কামনা করেন.

সামাজিক-আধ্যাত্মিক গুরুত্ব

  • দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের শিক্ষা
  • সংহতি ও একতার উৎসব
  • ভক্তি-শক্তির অনুপম মিলন
  • আত্মশুদ্ধি ও মোক্ষলাভের কল্পনা

পূজার অর্থ ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য

  • অন্ধকার ও কলুষ দুরীকরণ: কার্তিক অমাবস্যার গভীর রাত— সব আলো নিভে গেলে শুরু হয় কালীপূজা, যার মূলে প্রতীকীরা দুর্বিপাক, অশুভ এবং অজ্ঞান দূরীকরণ।
  • শক্তি ও সাক্ষাৎ সাহস: কালীর রূপ ভয়ঙ্কর অথচ তার ভক্তিরূপ আদৃত; অজ্ঞান-অন্ধকার, ক্লেশ-দুঃখ থেকে মুক্তির জন্য মা-কে আহ্বান।
  • আধুনিকতায় সংস্কৃতির নতুন পরঙ্গ: আজ কালী পূজা কেবল ধর্মীয় অনুষঙ্গ নয়, বরং সামাজিক-সাংস্কৃতিক ঐক্য, সহমর্মিতা ও আনন্দ-উৎসবের প্রতীক।

কালী পূজার উপাচার ও পালনের ধরণ

প্রধান হাইলাইটস:

  • মা কালী ও দক্ষিণাকালীর আরাধনা: বাংলায় সাধারণত দক্ষিণাকালী রূপেই মায়ের পূজা হয়
  • বারোয়ারি মণ্ডপ ও ঘরোয়া পূজা: পুরাণভিত্তিক আচার-বিধি সঙ্গে আধুনিক সজ্জা, আলো, থিমের মণ্ডপ
  • মন্ত্র, হোম, যজ্ঞ, ও প্রসাদ: নিশিথ কালে মন্ত্রোচ্চারণ, সহস্যারতী, হোম-যজ্ঞ ও বিশেষ প্রসাদ বিতরণ
  • লক্ষ্মীপূজা, দীপাবলি, আতসবাজি: একই রাতে আলোর উৎসব এবং আনন্দোৎসব

বিশেষ পূজা:

  • ফলহারিণী কালী পূজা ২০২৫: ২৬ মে সোমবার রাতে পালিত হবে (জ্যৈষ্ঠ মাসের অমাবস্যা).

রীতিনীতি ও বিশেষ শব্দচয়ন:

  • “ওম ক্রীং কালী”
  • “সর্বদা ভক্তের আশ্রয়দাত্রী মা কালী”

সমাজে কালী পূজার আধুনিক প্রাসঙ্গিকতা

  • সামাজিক ঐক্য: কালী পূজা বাঙালির সামাজিক সংহতির বড় এক মহড়া—মণ্ডপ সংগঠন, পাড়ার যৌথ অনুষ্ঠান, নিরাপত্তা ও সহযোগিতা।
  • সংস্কৃতি ও সৃষ্টিশীলতার মেলা: নানা প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, দাঁড়িয়ে থাকা শিল্প-অলংকরণ—থিম প্যান্ডেল, আতসবাজি, গ্রাম-শহরের মিলনে উৎসব।

AEO-Friendly: কালী পূজার সংক্ষিপ্ত Definition Box

কালী পূজা ২০২৫ (২০ অক্টোবর, সোমবার): কার্তিক অমাবস্যার রাতে শক্তির দেবী কালীর আরাধনা ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে জাগরণের উৎসব; নিশিথ কালে পূজার শুভ মুহূর্ত রাতে। একই রাতে দীপাবলি, লক্ষ্মীপূজাও পালিত হয়।


FAQ-Style Quick Table: পূজার সময়সূচী

অনুষঙ্গসময়বৈশিষ্ট্য
অমাবস্যা তিথি শুরু২০ অক্টোবর দুপুর ৩:৪৪কার্তিক মাস
নিশিথ কাল পূজারাত ১১:৪১–১২:৩১প্রধান পূজা, ৫১ মিনিট
অমাবস্যা তিথি শেষ২১ অক্টোবর বিকেল ৫:৫৪শেষ সময়

উপসংহার

কালী পূজা ২০২৫ বাঙালির চেতনাজুড়ে শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়— এটি শক্তির, সাহসের, অন্ধকার থেকে আলোর পথে চলার মহা বার্তা। সঠিক প্রস্তুতি, সমাজ-সংস্কৃতি-আধ্যাত্মিকতায় একাত্ম হয়ে আসুন, মা কালী’র আশীর্বাদ ও পাহারায়, পরিবার ও সমাজে সৌভাগ্য, সংহতি ও বিজয় বর্ষিত হোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *