গণেশ চতুর্থী — প্রতিটি হিন্দু পরিবারের নিকট আশীর্বাদ, আনন্দ এবং নতুন সূচনার বার্তা নিয়ে আসে। ২০২৫ সালের গণেশ চতুর্থী পালিত হবে ২৭ আগস্ট, বুধবার; চতুর্থী তিথি ২৬ আগস্ট ১২:০৩ PM-এ শুরু হয়ে ২৭ আগস্ট ১:৩৮ PM-এ শেষ হবে। এই উৎসবটিই গণেশ ঠাকুরের জন্মদিনে সারা ভারতের অনাবিল আনন্দ, ভক্তি ও ঐক্যের এক মহামিলন।
গণেশ চতুর্থী ২০২৫: ঐতিহ্য, তারিখ ও মাহাত্ম্য
শিরোনামে অনুভব করুন—শক্তি, শুভং এবং দেবতার করুণা!
গণেশ চতুর্থী কেবল নতুন উদ্যোগের শুরু নয়, এটি অন্তরায়ের দূরীকরণ, ঐক্য ও শান্তির এক মহান অনুশীলন। এই দিনে ভগবান গণেশের জন্মোৎসব পালিত হয়, যিনি সর্বপ্রথম পূজিত হন, যেকোনো শুভকাজ শুরুর পূর্বে।
শুভ জন্ম ও ঐতিহাসিক গল্প: গণেশের জীবনাবলী
গণেশ চতুর্থী কেন পালন করা হয়?
হিন্দু পুরাণে উল্লেখ রয়েছে—গৌরী দেবী (পার্বতী) তাঁর দেহের চন্দন মিশিয়ে গণেশকে সৃষ্টি করেন, শিবের আদেশে গণেশের মাথা কর্তিত হলে, শিবের অনুশাসনে পরে এক হাতির মাথা লাগানো হয়। তখন থেকেই গণেশকে “একদন্ত”, “বক্রতুণ্ড”, “গজানন”, “সিদ্ধিদাতা” ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়।
গণেশ দেবতা: জ্ঞান, বুদ্ধি, সৌভাগ্য, ও বাধা দূরীকরণের প্রতিচ্ছবি। তিনি “বিঘ্নহর্তা” — সকল বাধা ও কষ্টের সমাধানকারী।
গণেশ চতুর্থী ২০২৫: পূজা পদ্ধতি ও ক্যালেন্ডার
উৎসবের সময়সূচি ও পূজার গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্ত
তারিখ | সময় | কার্যক্রম |
---|---|---|
২৬ আগস্ট, ২০২৫ | ১২:০৩ PM | চতুর্থী তিথি শুরু |
২৭ আগস্ট, ২০২৫ | ১১:১৫ AM – ১:৪৫ PM | গণেশ স্থাপনা (মুহূর্ত) |
২৭ আগস্ট, ২০২৫ | ১:৩৮ PM | চতুর্থী তিথি শেষ |
পূজা যেমন করবেন:
- ঈশ্বর স্থাপনা: পরিষ্কার কক্ষ, মাটির বা ধাতব গণেশ মূর্তি স্থাপন
- আসন ও পদ্য: সাম্প্রতিক কাপড়ে গণেশ আসীন, পদ্য ও জল অর্পণ
- নৈবেদ্য-অর্ঘ্য: মোধক, ফল, সুগন্ধি, ফুল ও দুধ অর্পণ
- অর্থি ও কীর্তন: গান, আরতি, গণেশ মন্ত্র পাঠ
- ভক্তিগীতি: “গণেশ চতুর্থী আরতি”, “গণপতি বাপ্পা মরিয়া” ধ্বনি
উল্লেখযোগ্য মন্ত্র:
"বক্রতুন্ড মহাকায় সূর্যকোটি সমপ্রভা,
নির্বিঘ্নম কুরু মে দেব, সর্বকার্যেষু সর্বদা।"
উৎসবের পর ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫-এ “গণেশ বিসর্জন” পালিত হবে।
গণেশ চতুর্থীর আধুনিক ইতিহাস ও সামাজিক প্রভাব
ঐতিহাসিক পুনর্জাগরণ:
চতুর্থী প্রচলিত হয়েছিল চালুক্য, সাতভাহন, পেশওয়া যুগে, তবে ১৮৯৩ সালে লোকমান্য তিলক এটি “জনউৎসব”-এ পরিণত করেন, ভারতীয় জাতীয়তাবাদী ঐক্য গড়ার হাতিয়ার। তখন থেকেই সারাদেশ জুড়ে গণেশ চতুর্থী উৎযাপন শুরু হয় ইউনিটি, সংগ্রাম, সমবায়ের প্রতীক হয়ে। কালের বিবর্তনে এটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, পরিবেশবান্ধব উৎসবে রূপ নিয়েছে।
রীতি-নীতি ও পূজা-বিধি:
বাড়িতে পূজার ধাপ (সংক্ষেপ):
- ঘর শুদ্ধিকরণ ও গণেশ ছবি/মূর্তি স্থাপন
- ধূপ-দীপ-রং-ফুল দিয়ে সাজানো
- কাঁদা বা বায়োডিগ্রেডেবল গণেশ মূর্তি নির্বাচন (প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায়)
- ১-১১ দিন ধরে প্রতিদিন আরতি, প্রাসাদ, বলি দেওয়া
- দশম দিনে জলাশয়ে বিসর্জন
কোন মন্ত্র প্রয়োগ করবেন?
- “ওম গণেশায় নমঃ”
- “একদন্তায় বক্রতুন্ডায় গজাননায় নমঃ”
বিশেষ রীতিঃ
- গণেশের একটি দাঁত ভাঙা সম্বন্ধে: এটি বলী, আত্মোৎসর্গ ও অহংকারচ্যুতির প্রতীক।
- গণেশের স্নান, ধ্যান, পূজা, আরতি এবং পাঁচালী পাঠ
- ভক্তের চাওয়া— বিপদ, বাধা, দুঃখ দূরীকরণ
গণেশ চতুর্থীর সামাজিক-আধ্যাত্মিক মহত্ব
- গণেশ পূজার অর্থ: বাধা দূরীকরণ, সৌভাগ্য ও নতুনভাবে জীবন শুরু
- প্রবৃত্তির দিক: সংগঠন, সমবায়, সংহতি, আন্তরিকতা
- প্রার্থনা: পরিবারে সুখ, ব্যবসায় উন্নতি, শিক্ষায় উত্তরণ
গণেশ চতুর্থী কেবল একটি উৎসব নয়—এটি জীবনের শুভ সূচনা, বাধা পেরিয়ে জয়লাভ, ঐক্য-ভক্তি-উন্নয়নের মহা আহবান। সঠিক পূজা, পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ, পারিবারিক ও সামাজিক সমবায়—সব মিলিয়ে এই উৎসব আপনার জীবনকে জয়, সমৃদ্ধি ও আনন্দে ভরিয়ে তুলবে।
আজই পরিকল্পনা করুন, উৎসবটি সাজান, পরিবারের সাথে ভাগাভাগি করুন এবং আগামী বছরেরেও সম্মিলিত আনন্দের অপেক্ষায় থাকুন!