সাদিয়া আয়মান: আলো–আঁধারের পথ পেরিয়ে আকাশে উড়ার গল্প

Putul

August 20, 2025

সাদিয়া আয়মান

একজন তরুণ মেয়ে কীভাবে ক্যামেরা থেকে ক্যামেরার সামনে এসে মাতিয়ে দেয়—এ গল্পই হলো সাদিয়া আয়মানের। আজকের ব্লগে আমরা জানতে যাচ্ছি তার জন্ম–শৈশব থেকে শুরু করে মডেলিং, নাটক-সিনেমা, এমনকি মানবিক উদ্যোগ পর্যন্ত সব কিছু। যদি আপনি জানার ইচ্ছা নিয়ে এসে থাকেন—কে তিনি, কীভাবে নিজস্ব সংগ্রামকে শক্তি বানিয়েছেন, পরিবার তাকে কীভাবে গড়ে তুলেছে, আর কোন মূল্যবোধ তাকে এগিয়ে নিয়েছে—তাহলে সঠিক জায়গায় পা রেখেছেন।

এই পোস্টে কী শিখবেন?

  • সাদিয়া আয়মানের বাস্তব জীবনের শুরু ও শিক্ষাজীবন
  • পরিবার ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের খুঁটিনাটি
  • ক্যারিয়ারের বাঁকবদল—ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দা
  • ক্যান্সার রোগীর জন্য তার মানবিক উদ্যোগের অনুপ্রেরণাময় কাহিনি
  • ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও দর্শকের জন্য বার্তা

পরিচয় ও প্রাথমিক জীবন

জন্মসূত্রে এক সাধারণ মেয়ে হলেও মনের দিক থেকে অদ্ভুত রকমের সাহসী ছিলেন তিনি। বাবার পেশা একজন আলেম হওয়ায় শৈশবে ধর্মীয় মূল্যবোধ ছিল তার নিত্যসঙ্গী। গ্রামের মফস্বলের হাওয়া, স্কুল মাঠে দীর্ঘ বিকেল, আর পরিবারকেন্দ্রিক শিক্ষা তাকে শিখিয়েছে—আত্মবিশ্বাস আর সততা কখনও হেরে যায় না।

স্কুল-কলেজে পড়াকালেই নিজের মোবাইল দিয়ে ছবি তোলা শুরু করেন; সে সময় কেউ ভাবেনি এই শখ একদিন তার পরিচয় হয়ে উঠবে। ২০১৬ সালে, এইচএসসি পরীক্ষার ঠিক আগে, জীবনের প্রথম ফটোশুট করলেন তিনি—বন্ধুরা সোশ্যাল-মিডিয়ায় প্রশংসা ঝুলিয়ে দিলেন। সেখান থেকেই শুরু হল ‘মডেল’ শব্দের সঙ্গে তার যোগাযোগ।

পরিবার ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক

বাবার ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব তাকে দায়িত্বশীল আর নম্র করে তুলেছে; মায়ের চিন্তাশীল পরিচর্যা তাকে দিয়েছে সহমর্মিতার বীজ। ভাই-বোনেরা তার সবচেয়ে বড় সমর্থক, যারা প্রতিটি নতুন কাজের আগে “আরে, করতেই হবে!” বলে সাহস জুগিয়ে যায়।

ঈদ এলেই, রুপালি পর্দার কাজ যাই থাকুক, তিনি ছুটে যান স্কুল জীবনের বন্ধুবান্ধবের কাছে। ‘স্টার’ ট্যাগ ছুঁড়ে ফেলে, এক কাপ চা আর টং দোকানের হালকা আড্ডায় ফিরে পান পুরোনো দস্যিপনা। ব্যক্তিগত সম্পর্কে এখনো অবিবাহিত; তবে পরিবার-বন্ধু-ভক্ত—সব মিলিয়ে তার চারপাশে ভালোবাসার কমতি নেই।

সংগ্রামের সূচনা ও ক্যারিয়ার ব্রেকথ্রু

স্কুল ক্যামেরা থেকে ফটোশুট পর্যন্ত

ছবির প্রতি ভালোবাসা তাকে টেনে নেয় অচেনা সব স্টুডিওতে। প্রথম দিকে সাহস জোগাতে হত বন্ধুদের; কিন্তু শুটিং ফ্লোরে ক্যামেরার ফ্ল্যাশ যখন চোখে পড়ল, দৃঢ় হয়ে উঠল প্রতিজ্ঞা—নিজেকে বড় পর্দায় দেখতে হবে।

সাদিয়া আয়মানের নাটকে প্রথম চুক্তি: ছোট্ট চরিত্র, বড় স্বপ্ন

ছোটপর্দায় প্রথম চরিত্র ছিল মাত্র তিন মিনিটের; কিন্তু পরিচালক বুঝে ফেললেন, মেয়েটার চোখে গল্প আছে। একের পর এক নাটকে পার্শ্বচরিত্র করেও তিনি অভিনয়ের গাঢ় ছাপ ফেলে গেলেন, তৈরি হল ভক্ত-শ্রোতাদের আলাদা কৌতূহল।

সাদিয়া আয়মানের সিনেমায় আত্মপ্রকাশ: লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন

একদিন ফোন এলো—“সিনেমার জন্য অডিশন দিলে কেমন হয়?” পরীক্ষার ফলের আগেই নিজেকে দাঁড় করালেন অডিশন রুমে। সুযোগ পেলেন পার্শ্বচরিত্রে, তবে তাকে কেউ ভোলা সম্ভব হল না। ছোট পর্দা পেরিয়ে বড় পর্দায় যখন নাম উঠল, ছাত্রজীবনের সেই স্বপ্ন যেন বাস্তব হল।

মানবিক কাজ ও সামাজিক দায়িত্ব

ক্যান্সার রোগীর জন্য তহবিল সংগ্রহ

২০১৮ সাল। অভিনয় পরিচিতি তখনো পূর্ণতা পায়নি। হঠাৎ জানতে পারলেন, এক নারী ক্যান্সারের শেষ পর্যায়ে লড়াই করছেন। ফেসবুকে তিন-চার জনের ছোট টিম গঠন করলেন; পোস্ট করলেন সাহায্যের আবেদন, নিজেও দিলেন প্রথম অনুদান। কয়েক দিনের মধ্যে টাকা উঠে এলো, এবং তিনি হাত ধরে পৌঁছে দিলেন সেই অর্থ। মানুষ দেখল—কাজটা ‘স্টার’ বানানোর আগে একজন মানবিক মানুষের।

সামাজিক প্রকল্পে ধারাবাহিক ভূমিকা

সেই ঘটনা তাকে বদলে দিল। এরপর থেকে পথশিশুদের শীতবস্ত্র, বন্যাক্রান্তদের খাবার বিতরণ, এমনকি স্কুলের বৃত্তিহীন মেধাবীদের শিক্ষা-সহায়তা—যেখানেই সুযোগ, সেখানেই তিনি আছেন সামনে থেকে। এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “পরদায় আমি চরিত্র, বাস্তবে আমি মানুষ—মানুষের পাশে না দাঁড়াতে পারলে শিল্পীর সার্থকতা কোথায়?”

সাদিয়া আয়মানের জনপ্রিয় নাটক ও সিনেমা: বাছাইকৃত তালিকা

মাধ্যমপ্রযোজনার নামচরিত্রউল্লেখযোগ্য দিক
নাটক‘আলোর ঠিকানা’কলেজ শিক্ষার্থীবাস্তব সংলাপ, প্রাণবন্ত অভিনয়
নাটক‘জোনাকি সন্ধ্যা’সংবাদপাঠকআবেগঘন মোনোলগ
সিনেমা‘স্বপ্নযাত্রা’বান্ধবীসপ্রতিভ স্ক্রিন প্রেজেন্স
সিনেমা‘পাখি ডাকে’নায়িকাগ্রামীণ ভাষা আয়ত্তের প্রশংসা

অনুপ্রেরণা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “স্বপ্ন দেখতে হবে বড়, আর হাঁটতে হবে ছোট ছোট ধাপে।” ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক প্রজেক্টে অভিনয় করার ইচ্ছা আছে, পাশাপাশি একটি অভিনয় স্কুল খোলার পরিকল্পনাও করছেন, যেখানে নবীনদের শেখাবেন—শুধু প্রযুক্তি নয়, হৃদয়ও লাগে চরিত্র হতে।

সাদিয়া আয়মান আমাদের দেখিয়েছেন—স্বপ্নের শুরু হতে পারে একটি মোবাইল ক্যামেরা থেকে, আর শেষটা পৌঁছতে পারে মানুষের হৃদয়ে। এই গল্পে আছে পরিবার-ঘেঁষা মূল্যবোধ, অধ্যবসায়ের ঘাম, আর মানবিক ভালবাসার সুবাস। তার পথচলা জানান দেয়, সাফল্য মানে কেবল আলো নয়; ছায়ার ভেতরেও চেষ্টা করে যেতে হয়।

আপনি কি তার পাশে থাকবেন এই যাত্রায়? মতামত জানান, পোস্টটি শেয়ার করুন, আর পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের সাথেই থাকুন!

Leave a Comment