সোনার দাম কত আজকে ২০২৫? বাংলাদেশের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য

Putul

August 13, 2025

সোনার দাম কত

আজকের অর্থনৈতিক অস্থিরতার যুগে সোনার দাম কত এই প্রশ্নটি প্রতিদিন হাজার হাজার বাঙালির মনে উঁকি দেয়। ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে এসে সোনার দাম আবারও রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশে এক ভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম এখন ১,৭১,৬১৮ টাকা, যা গত বছরের তুলনায় ২৫% বেশি। আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দর বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সোনার দাম ক্রমাগত বাড়ছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, গত ৬ মাসে সোনার দাম গড়ে প্রতি মাসে ৩-৪% করে বেড়েছে। প্রতি গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনার দাম এখন ১৪,৭১২ টাকা, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ। এই প্রতিবেদনে আমরা জানব বর্তমান সোনার দাম, বিভিন্ন ক্যারেটের তুলনামূলক মূল্য এবং সোনা কেনার সঠিক সময় ও কৌশল।

২০২৫ সালের হালনাগাদ সোনার দাম তালিকা

২২ ক্যারেট সোনার বর্তমান দর

আজকের বাজারে ২২ ক্যারেট সোনার দাম কত তা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটিই বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় সোনার গুণমান। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২২ ক্যারেট সোনার দাম প্রতি গ্রাম ১৤,৭১২ টাকা। এক ভরি (১১.৬৬৴ গ্রাম) ২২ ক্যারেট সোনার দাম ১,৭১,৬১৮ টাকা।

এই দাম সারাদেশে একই হলেও বিভিন্ন এলাকায় তৈরির খরচ এবং দোকানের মার্জিনের কারণে সামান্য ভিন্নতা হতে পারে। ঢাকার চাঁদনী চক এবং নিউমার্কেটে তৈরির খরচ সাধারণত কিছুটা কম থাকে। এক আনা (০.৭২৯ গ্রাম) ২২ ক্যারেট সোনার দাম বর্তমানে ১০,৭২৫ টাকা।

২১ ক্যারেট এবং ১৮ ক্যারেট সোনার দাম

২১ ক্যারেট সোনা মূলত ঐতিহ্যবাহী অলংকার এবং বিশেষ ডিজাইনের জন্য ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে এর দাম প্রতি গ্রাম ১৪,০৪৩ টাকা এবং প্রতি ভরি ১,৬৩,৮২৯ টাকা। এই ক্যারেটের সোনায় ২১ অংশ খাঁটি সোনা এবং ৩ অংশ অন্যান্য ধাতু মিশ্রিত থাকে।

১৮ ক্যারেট সোনা আধুনিক ডিজাইনের গহনা এবং বিদেশি ডিজাইনের অলংকারের জন্য বেশি ব্যবহার হয়। এর প্রতি গ্রামের দাম ১২,০৩৭ টাকা এবং প্রতি ভরি ১,৪০,৪৩২ টাকা। ১৮ ক্যারেট সোনা কম খাঁটি হলেও আধুনিক ডিজাইনের জন্য জনপ্রিয়।

সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম

পুরাতন পদ্ধতিতে তৈরি সোনা, যা সনাতন পদ্ধতি নামে পরিচিত, এর প্রতি গ্রামের দাম ৯,৯৫৬ টাকা। এই ধরনের সোনা সাধারণত গ্রামীণ এলাকায় এবং ঐতিহ্যবাহী অলংকার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। তবে এর বিশুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে।

সোনার দামের উপর প্রভাব বিস্তারকারী বিষয়সমূহ

আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব

আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম প্রতি আউন্স ২,৬২০ ডলারের কাছাকাছি রয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ২২% বেশি। ডলারের বিপরীতে টাকার দুর্বলতা বাংলাদেশে সোনার দাম কত বৃদ্ধি পাবে তার প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলে। বর্তমানে এক ডলার ১২৩ টাকার কাছাকাছি, যা গত বছরের তুলনায় ১৫% বেশি।

ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক টেনশনের ফলে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনার দিকে ঝুঁকছেন। চীন এবং ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রমাগত সোনার মজুদ বাড়াচ্ছে, যা বৈশ্বিক দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

স্থানীয় অর্থনৈতিক কারণ

বাংলাদেশে আমদানি শুল্ক এবং ভ্যাট সোনার দামের ২৫-৩০% অংশ। সরকার সোনা আমদানিতে প্রতি ভরি ৫২০০ টাকা শুল্ক এবং ১৫% ভ্যাট ধার্য করে। এছাড়াও রেগুলেটরি ডিউটি এবং অন্যান্য ফি মিলিয়ে মোট করের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য। এই করের হার পরিবর্তন হলে সোনার দাম সরাসরি প্রভাবিত হয়।

চাহিদা ও সরবরাহের প্রভাব

বিয়ে-শাদীর মৌসুমে এবং ধর্মীয় উৎসবে সোনার চাহিদা উল্লেখযোগ্য বেড়ে যায়। বিশেষ করে অক্টোবর-ডিসেম্বর এবং ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল মাসে চাহিদা সর্বোচ্চ থাকে। এই সময় তৈরির খরচ এবং প্রাপ্যতার কারণে দাম ৫-৭% পর্যন্ত বেশি হতে পারে।

বিভিন্ন অঞ্চলে সোনার দামের তুলনা

ঢাকা বিভাগের সোনার দাম

ঢাকা শহরে সোনার প্রাথমিক দাম একই হলেও তৈরির খরচে পার্থক্য রয়েছে। চাঁদনী চক, নিউমার্কেট এবং গাউসিয়া মার্কেটে তৈরির খরচ প্রতি ভরি ৮০০-১২০০ টাকা। সাভার, গাজীপুর এবং নারায়ণগঞ্জে তৈরির খরচ ১২০০-১৮০০ টাকা।

উত্তরা, ধানমন্ডি এবং গুলশানের দামি শোরুমে তৈরির খরচ ২০০০-৩৫০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এসব জায়গায় ডিজাইন এবং ব্র্যান্ড ভ্যালুর জন্য অতিরিক্ত খরচ হয়।

চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগ

চট্টগ্রাম শহরে সোনার দাম ঢাকার প্রায় সমান। তবে তৈরির খরচ সামান্য বেশি, প্রতি ভরি ১০০০-১৫০০ টাকা। কক্সবাজার, রাঙামাটি এবং বান্দরবানের মতো দূরবর্তী এলাকায় তৈরির খরচ ২০০০-৩০০০ টাকা বেশি।

সিলেট শহরে তৈরির খরচ ঢাকার চেয়ে ৫০০-৮০০ টাকা বেশি। হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং সুনামগঞ্জে আরও বেশি খরচ হয়।

উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণাঞ্চল

রংপুর, দিনাজপুর এবং কুড়িগ্রামে তৈরির খরচ সবচেয়ে বেশি। এখানে প্রতি ভরি ২৫০০-৪০০০ টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়। পরিবহন ব্যয় এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মার্জিনের কারণে এই অতিরিক্ত খরচ।

বরিশাল, পটুয়াখালী এবং ভোলায়ও তৈরির খরচ তুলনামূলক বেশি, প্রতি ভরি ১৮০০-২৮০০ টাকা।

সোনা কেনার সঠিক সময় এবং কৌশল

বছরের কোন সময় সোনা কিনলে সুবিধা

সাধারণত জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে চাহিদা কম থাকায় তৈরির খরচ কিছুটা কমে। বর্ষার সময় বিয়ে-শাদী কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা কাস্টমারদের আকর্ষণের জন্য তৈরির খরচে ছাড় দেন। এই সময় সোনার দাম কত কমানো যায় তা নির্ভর করে তৈরির খরচের উপর।

আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম সাধারণত রাতে ১২টার পর এবং সকালে আপডেট হয়। সপ্তাহের মাঝামাঝি এবং মাসের মাঝামাঝি সময়ে স্থিতিশীল থাকে।

কেনার আগে যা যা জানবেন

সোনা কেনার আগে অবশ্যই BSTI এর হলমার্ক চেক করুন। ২০২৩ সাল থেকে হলমার্ক ছাড়া সোনা বিক্রি নিষিদ্ধ। ক্যারেট এবং ওজন সঠিক আছে কিনা ডিজিটাল স্কেলে যাচাই করুন। বিল এবং ওয়ারেন্টি কার্ড অবশ্যই সংরক্ষণ করুন।

তৈরির খরচ আলাদাভাবে বুঝে নিন এবং একাধিক দোকান থেকে দাম তুলনা করুন। অনেক সময় একই ডিজাইনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন খরচ হতে পারে।

হলমার্ক সোনার গুরুত্ব

হলমার্ক সোনার বিশুদ্ধতা গ্যারান্টিযুক্ত এবং পুনঃবিক্রয়ের সময় ভালো দাম পাওয়া যায়। হলমার্ক ছাড়া সোনা কিনলে পরে বিক্রির সময় সমস্যা হতে পারে এবং দামও কম পাওয়া যায়।

ভবিষ্যৎ দামের পূর্বাভাস এবং বিশেষজ্ঞ মতামত

২০২৫ সালের বাকি মাসের জন্য প্রত্যাশা

আর্থিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ সোনার দাম আরও ১০-১৫% বাড়তে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা এবং মুদ্রাস্ফীতির কারণে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনার দিকে ঝুঁকছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর ড. আতিউর রহমানের মতে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত সোনার দাম বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। তবে তিনি সতর্ক করেছেন যে অতিরিক্ত বৃদ্ধি হলে সরকার আমদানি নীতি পরিবর্তন করতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ হিসেবে সোনা

গত ২৫ বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সোনার দাম গড়ে প্রতি বছর ১০-১৪% বৃদ্ধি পেয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির বিপরীতে সোনা একটি কার্যকর হেজ হিসেবে কাজ করে এবং অর্থনৈতিক সংকটের সময় আরও ভালো রিটার্ন দেয়।

বিনিয়োগকারীদের জন্য পরামর্শ

সোনায় বিনিয়োগের জন্য মোট সম্পদের ১৫-২৫% বরাদ্দ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। একসাথে সব না কিনে কয়েক মাস ধরে ধাপে ধাপে কিনুন। এতে দামের ওঠানামার ঝুঁকি কমবে।

সোনা বিক্রয় এবং বিনিময়ের হালনাগাদ নিয়মকানুন

কখন সোনা বিক্রি করলে লাভ

সোনা বিক্রির জন্য বিয়ে-শাদীর মৌসুম এবং ধর্মীয় উৎসবের সময় সবচেয়ে ভালো। এই সময় চাহিদা বেশি থাকায় ভালো দাম পাওয়া যায়। সাধারণত কেনার দামের ৯৫-৯৮% দাম পাওয়া যায় যদি হলমার্ক এবং সব কাগজপত্র ঠিক থাকে।

বর্তমানে অনেক স্বর্ণের দোকান পুরাতন সোনার বিনিময়ে নতুন সোনা কেনার সুবিধা দেয়। এক্ষেত্রে ওজন কমতি ৩-৫% এবং তৈরির খরচ আলাদা।

বিক্রয়ের সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

সোনা বিক্রির সময় অবশ্যই মূল বিল, ওয়ারেন্টি কার্ড এবং হলমার্ক সার্টিফিকেট থাকতে হবে। এগুলো ছাড়া দাম ১৫-২৫% পর্যন্ত কমে যেতে পারে। জাতীয় পরিচয়পত্র এবং প্রয়োজনে TIN সার্টিফিকেটও লাগতে পারে।

ট্যাক্স এবং আইনি বিষয়

বড় অংকের সোনা বিক্রির ক্ষেত্রে আয়কর প্রযোজ্য হতে পারে। ৫ লাখ টাকার বেশি লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং সোর্স অব ইনকাম দেখাতে হতে পারে।

চূড়ান্ত মন্তব্য

সোনার দাম কত এই প্রশ্নের উত্তর আজ ১৭১,৬১৮ টাকা প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট সোনার জন্য। এই রেকর্ড উচ্চ দাম সত্ত্বেও সোনা এখনও একটি নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী মাসগুলোতে এই দাম আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। সোনা কেনার সময় অবশ্যই হলমার্ক যাচাই করুন এবং বিশ্বস্ত দোকান থেকে কিনুন। মনে রাখবেন, বর্তমানের উচ্চ দামে সোনা কেনার আগে আপনার আর্থিক সামর্থ্য এবং প্রয়োজন বিবেচনা করুন। দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ হিসেবে সোনা ভালো হলেও স্বল্পমেয়াদে লাভের আশা করা ঠিক নয়। আজকের বাজারে সোনা কিনতে চাইলে ধৈর্য রাখুন এবং দাম কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ার অপেক্ষা করুন। কমেন্টে জানান বর্তমান দামে আপনি সোনা কিনবেন কিনা এবং সোনার দাম নিয়ে আপনার কী মতামত।

Leave a Comment